এক বছর আগে আফ্রিকায় ভারতীয় একটি ওষুধ কোম্পানির সর্দি-জ্বরের সিরাপ পানের পর ১৪০ শিশুর প্রাণহানি ঘটে। এ নিয়ে বিশ্বজুড়ে ভারতীয় কোম্পানিগুলোর পণ্যসামগ্রীর মান সম্পর্কে প্রশ্ন ওঠে। সেই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই গত এপ্রিলে হংকংয়ে ভারতীয় ওই দুই কোম্পানির গুঁড়া মশলায় ক্যান্সার-সৃষ্টিকারী উপাদান পাওয়ার তথ্য জানানো হয়।
পরে মাছ রান্নায় ব্যবহৃত ভারতীয় কোম্পানি এমডিএইচের তিন ধরনের গুঁড়া মশলা ও এভারেস্টের একটি গুঁড়া মশলার বিক্রি স্থগিত করে হংকং।
দেশটির বিখ্যাত গুঁড়া মশলার প্রস্তুতকারক দুই প্রতিষ্ঠান এমডিএইচ ও এভারেস্ট স্পাইসেসের মশলায় ক্যান্সার-সৃষ্টিকারী উপাদান ইথিলিন অক্সাইড পাওয়ার ঘটনায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তদন্ত শুরু হয়। এরইমধ্যে এশিয়ায় সিঙ্গাপুর এবং হংকংয়ের বাজার থেকে এই দুই ভারতীয় কোম্পানির মশলা বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।
হংকংয়ের কর্তৃপক্ষ এমডিএইচ ও এভারেস্টের মশলার মান নিয়ে সতর্ক সংকেত জারি করায় অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশগুলোতেও একই ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে। এরইমধ্যে এসব দেশে ওই দুই কোম্পানির পণ্যসামগ্রীতে রাসায়নিকের উপস্থিতি আছে কি না তা জানতে তদন্ত শুরু হয়েছে।
ভারতের বৃহত্তম দুই মশলা কোম্পানির বিরুদ্ধে অতীতেও একই ধরনের অভিযোগ উঠেছিল। ২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে রপ্তানি করা এমডিএইচের কিছু পণ্যে ক্ষতিকর ব্যাক্টেরিয়া পাওয়া যায়। পরে দেশটির বাজার থেকে সেসব পণ্য প্রত্যাহার করে নেয় এমডিএইচ। আর ২০২৩ সালে মার্কিন খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন (এফডিএ) এভারেস্টের গুঁড়া মশলায় ব্যাক্টেরিয়া পায়। ওই সময়ও যুক্তরাষ্ট্রের বাজার থেকে এভারেস্টের গুঁড়া মশলা প্রত্যাহারের নির্দেশ দেয় এফডিএ।
২০২০ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৪ সালের এপ্রিল মাস পর্যন্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের খাদ্য নিরাপত্তা কর্তৃপক্ষ ভারতের সাথে সংশ্লিষ্ট ৫২৭টি পণ্যে ইথিলিন অক্সাইড খুঁজে পেয়েছে। এসবের বেশিরভাগই বাদাম এবং তিল বীজ (৩১৩), ভেষজ ও মশলা (৬০), ডায়েট জাতীয় খাদ্য (৪৮) এবং অন্যান্য খাদ্যপণ্য (৩৪)।
ইউরোপে রপ্তানি করা ভারতীয় এসব পণ্যের ৮৭টি চালান ইউরোপীয় ইউনিয়নের সীমান্তে আটকে দেওয়া হয়। এছাড়া বাকিপণ্য বাজার থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়। ইউরোপীয় কমিশনের র্যাপিড অ্যালার্ট সিস্টেম ফর ফুড অ্যান্ড ফিড বলছে, ২০২৩ সালের শুরু থেকে ভারতীয় খাদ্য পণ্যগুলোর মাঝে অন্তত ১৬৬টি পণ্য ‘গুরুতর’ ঝুঁকি তৈরি করেছে বলে ধারণা করা হয়।
এর মধ্যে সুইডেন, গ্রিস এবং ইতালিসহ ইউরোপের অন্যান্য দেশে বিভিন্ন ধরনের ভারতীয় খাদ্যপণ্য ও মশলায় ইথিলিন অক্সাইড পাওয়ার ৯টি ঘটনাও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।