বাংলাদেশে নিত্যপণ্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতিতে দিশেহারা স্বল্প ও সীমিত আয়ের মানুষ। কাল রোববার পবিত্র শবে বরাত। শবে বরাত পালনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় মাহে রমজানের প্রস্তুতি। আর এরমধ্যেই আরো একদফা বেড়েছে চাল, ডাল, চিনি, পেঁয়াজ, রসুন, মাছ, গোশতসহ ভোগ্যপণ্যের দাম। রোজার আগেই বাজারে জিনিসপত্রের দামে আগুন ক্রেতাদের নাভিশ্বাস উঠেছে। ক্ষুব্ধ ক্রেতারা বলছেন, বাজারে সরকারের কোন নিয়ন্ত্রণ নেই। সিন্ডিকেটবাজীর কাছে সাধারণ মানুষ জিম্মি হয়ে পড়েছে। নানা অজুহাতে চলছে লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধি।
টানা চার বারের মতো ক্ষমতা গ্রহণের পর সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে মূল্য কারসাজি আর সিন্ডিকেটবাজীর বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি দেয়া হয়। বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী চট্টগ্রামসহ দেশের ব্যবসায়ী নেতাদের সাথে বৈঠক করে ভোগ্যপণ্যের কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি না করে দ্রব্যমূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখার আহ্বান জানিয়েছেন। পবিত্র রমজানে অত্যাবশ্যকীয় কিছু পণ্যের আমদানি শুল্ক হ্রাস করা হয়েছে। তবে এসবের কোন প্রভাব পড়েনি বাজারে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশে ক্রমবর্ধমান ডলার সঙ্কটের কারণে আমদানি কমেছে। আবার ডলারের মূল্য বৃদ্ধির কারণে অনেক আমদানি পণ্যের দাম বেড়েছে। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর কারণে বেড়েছে পরিবহন ভাড়া। তার সাথে যোগ হয়েছে সড়ক মহাসড়কে পণ্যবাহী যানবাহনে চাঁদাবাজি। তাতে পণ্যের দাম বাড়ছে।
সিন্ডিকেটের লাগাম টানতে সরকারের ব্যর্থতা সেইসঙ্গে ব্যবসায়ীদের অতি বেশি লাভের প্রবণতা ভোগ্যপণ্যের বাজারকে অস্থির করে তুলেছে। প্রতি বছরের মতো এবারও রোজার আগে শবেবরাত সামনে রেখেই মূল্য বৃদ্ধির হিড়িক পড়েছে। গতকাল শুক্রবার বাজার ঘুরে দেখা গেছে, শবেবরাতে চাহিদা বাড়ে এমন প্রায় সব পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি এলাকাভেদে ২১০ থেকে ২৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সোনালি মুরগি প্রতি কেজি ৩৩০ থেকে ৩৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর দেশি মুরগির কেজি ৫০০ থেকে সাড়ে ৫০০ টাকা। ডিমের হালি বিক্রি হচ্ছে ৪৫ টাকায়। গরুর গোশতের দাম কেজিতে ৫০ টাকা বেড়ে ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। চাহিদার তুলনায় গরুর সরবরাহ কম থাকায় দোকানিরা বলছেন, দাম আরও বাড়তে পারে। এ সময়ে ব্রয়লার মুরগির চাহিদাও বাড়ে। চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় দাম বেড়েছে।
ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানির প্রক্রিয়া শুরু হলেও পণ্যটির দাম কমার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১১০ থেকে ১৩০ টাকায়। ব্যবসায়ীরা জানান, সপ্তাহের ব্যবধানে চাল, ডালসহ সব কিছুর দাম বেড়েছে। প্রতি কেজি মোটা চাল ৫০ থেকে ৫৫ টাকা, মশুর ডালের কেজি মানভেদে ১১০ থেকে ১৪০ টাকা, মোটা মশুর ডালের কেজি ৮০ থেকে ৯০ টাকা, মুগ ডাল ১৫০ থেকে ১৬০টাকা, মাষকলাইর ডাল ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। রসুনের কেজি ১৮০ থেকে ২০০ টাকা, আদার কেজি ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা। সয়াবিন তেলের লিটার ১৭২ টাকা। সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী আগামী ১ মার্চ থেকে ১৬২ টাকায় বিক্রি হবে। সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ১০ টাকা কমানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।
এ ছাড়া বাজারে পর্যাপ্ত শাকসবজি থাকলেও তুলনামূলভাবে দাম কমেনি। প্রতি কেজি সবজি মানভেদে ৩০ থেকে ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাজারে আকারভেদে প্রতি কেজি ফুল ও বাঁধাকপি ৩০ থেকে ৪০ টাকা, শালগম, পেঁপে, গাজর ও টমেটোর কেজি ৪০ টাকা, মুলার কেজি ৩০ টাকা, শিমের দাম কিছুটা কমে ৪০ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। লম্বা বেগুনের কেজি ৬০ টাকা এবং গোল বেগুন ৮০, চিচিঙ্গা ৬০, লতি ৮০, করলা আকারভেদে ১৬০ থেকে ১৮০ টাকা, লাউয়ের দাম কিছুটা কমে প্রতি পিস বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়। খিরা ৫০ টাকা এবং শসার কেজি ৬০ টাকা, কাঁচামরিচ ৮০ টাকা, শিমের বিচির কেজি ১২০ টাকা, মটরশুঁটি ১০০ থেকে ১২০ টাকা, খোসাসহ মটরশুঁটি ৮০ টাকা, ঢ্যাঁড়শের কেজি ১২০ টাকা, কলার হালি ৩০ টাকা, আলুর কেজি ৩০ থেকে ৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া শাকের আঁটি আকারভেদে ২০ থেকে ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে সামুদ্রিক মাছের সরবরাহ কম থাকলেও পুকুর ও খামারের মাছের পর্যাপ্ত সরবরাহ রয়েছে। কিন্তু দাম চড়া। আকার ভেদে প্রতি কেজি রুই মাছ ৩০০ থেকে ৩৫০টাকা, কাতল ৩৫০ থেকে ৪০০টাকা, তেলাপিয়া মাছ ২০০ থেকে ২৫০ টাকা, সামুদ্রিক কোরাল ৪৫০ থেকে ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ছোট চিংড়ি কেজি ৭০০ থেকে ৮০০, বড় চিংড়ি ৮০০ থেকে এক হাজার টাকা।